‘জবাবদিহিতার অভাবকে’ সড়কের মূল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বেশি কথা বলার কারণ এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর অর্ধেক চাইলেই এড়ানো যেত। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির শীর্ষ পদে সরকারের দুজন মন্ত্রীর থাকার বিষয়ে ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা নীতি নির্ধারণ করেন, তিনিই আবার মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি।
জবাবদিহিতার ব্যাপারে যে অনাগ্রহ এর মূলে রয়েছে এই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।’ এবারের ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৩ দিনে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ২৩৭টি দুর্ঘটনায় ২৫৯ জন নিহত এবং ৯৬০ জন আহত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য দেন। তিনি জানান, ঈদ যাত্রার শুরুর দিন ১৬ই আগস্ট থেকে ঈদের পর ২৮শে আগস্ট পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই হিসাবে গত রোজার ঈদের চেয়ে এবারের কোরবানির ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা কমেছে। আর এজন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে কৃতিত্ব দিচ্ছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, গত ১৬ই আগস্ট থেকে ২৮শে আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৩ দিনে সারা দেশে ২৩৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৫৯ জন নিহত হয়েছেন।সড়কে ব্যাপকহারে দুর্ঘটনায় যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন বা বিশ্রামহীন যানবাহন চালানো, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালক-হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেলের অবাধে চলাচল, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাথ না থাকা ও সড়কের বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।
পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৯৬০ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার কারণে ঈদুল ফিতরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আহত ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে। তবে, ২০১৭ সালে ঈদুল আজহার তুলনায় এবার ১৩.৫০ শতাংশ নিহত এবং আহত ১১.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৫ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক, ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ কার-মাইক্রোবাস ও ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
এ ছাড়া মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়া, ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ১ দশমিক ১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ১ দশমিক ২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ৫ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর