নগরীর আগ্রাবাদে জাম্বুরি পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে আজ শনিবার। আজ বিকাল চারটায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামবাসীর জন্য তাঁর স্বপ্নের পার্কটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের আগেই পার্কের সকল কাজ শেষ করে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তুলেছে কর্তৃপক্ষ। কৌতূহলী মানুষের চাপ সামলাতে উদ্বোধনের অনেক আগে থেকেই পার্কটির মূল ফটক খুলে দেওয়া হয় প্রতিদিন বিকেল চারটায়।
গতকাল শুক্রবার বিকালে গিয়ে দেখা গেছে, পার্ক জুড়ে উপচেপড়া ভিড়। নানা বয়সী মানুষ এখানে বেড়াতে এসেছেন। কেউ দল বেধে হাঁটছেন, কেউ দাঁড়িয়ে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছেন। আবার অনেকেই দল বেঁধে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সব মিলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পার্কটি।
ছুটির দিনসহ প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষ ভিড় করেন বলে জানান পার্কের নিরাপত্তা কর্মীরা। ৮ দশমিক ৫৫ একর জমির উপর সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পার্কটি বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদফতর। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাসের শেষের দিকে।
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এই জায়গাটি এখন চট্টগ্রামবাসীর মানসিক প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছে। উন্মুক্ত পার্কটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো টিকিট লাগবে না। পার্কে লেকের পাড়ে হাঁটতে পারবেন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। পার্কের বিশাল মাঠ জুড়ে পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে হরেক রকম ফুল ও ফলের গাছ। মানসিক প্রশান্তির জন্য দীর্ঘ মনোরম লেক, লেকের মাঝে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। ক্লান্তি দূর করতে রয়েছে বসার বেঞ্চ ও গ্যালারি। পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে আর কম্পাউন্ড রোড মিলে ৮ হাজার রানিং ফুটের পার্কটির মাঝে ৫০ হাজার বর্গফুটের জলাধার রাখা হয়েছে। জলাধারের কিনারায় বসার জন্য তিনটি বড় গ্যালারি আছে। মাঠজুড়ে সাড়ে পাঁচশ লাইটের পাশাপাশি নজরকাড়া দুটি বর্ণিল ফোয়ারা রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে পার্কটি। বিশাল পার্ক জুড়ে লাগানো হয়েছে সোনালু, শিউলি, নাগেশ্বর, টগর, হৈমন্তী, শিমুল, সাইকাস, রাঁধাচূড়া, কাঠচাঁপা, জারুল, বকুলসহ ১০ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ।
গৃহায়ণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগের কারণেই জাম্বুরি মাঠে পার্কটি নির্মিত হয়। জাম্বুরি পার্ককে দেশের অন্যতম নান্দনিক পার্ক উল্লেখ করে চট্টগ্রাম খবরকে তিনি জানান, সাড়ে আট একর জমির উপর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে অত্যাধুনিক–দৃষ্টিনন্দন পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি হবে দেশের অন্যতম নান্দনিক একটি পার্ক। রমনা পার্কের আদলে এ পার্কে হাঁটার জন্য প্রচুর খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। মনোরম প্রকৃতির পাশাপাশি এই পার্কে দর্শনার্থীরা খুঁজে পাবেন মানসিক প্রশান্তিও। হরেক রকম ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। পার্কে রয়েছে শরীর চর্চার জন্য প্রশস্ত ও দীর্ঘ জগিং ট্র্যাক, উন্মুক্ত উদ্যান এবং জলাধার।
স্বপ্নের এই পার্কে স্বাস্থ্য সচেতন ও ভ্রমণপিপাসু ৫ হাজার মানুষ এক সাথে হাঁটতে পারবেন বলে জানান পার্ক নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএইচবি অ্যান্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজের এমডি এরশাদুল হক বাবর। তিনি জানান, পার্কে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৬টি ফটক। জলাধারের পাশে রয়েছে দুটি পাম্প হাউস। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। মাঠজুড়ে লাগানো হয়েছে ৬৫ প্রজাতির ১০ হাজার গাছের চারা। কদমতলী থেকে বেড়াতে যাওয়া ব্যবসায়ী মো. নাসির মিয়া জানান, চট্টগ্রামে এত বড় পরিসরে এ রকম নান্দনিক পার্ক এটিই প্রথম। সব শ্রেণী–পেশার মানুষের মন জয় করবে পার্কটি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ নূর চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, স্থাপত্য অধিদফতরের নকশায় জাম্বুরি পার্কের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই এলাকাবাসীর আগ্রহের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পার্কটি। যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে পারবেন এই পার্কে। পার্কটি কাউকে লিজ দেওয়া হচ্ছে না। গণপূর্ত বিভাগ এটির রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ইতোমধ্যে আমরা ৬টি গেটে সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি।
তিনি জানান, মন্ত্রী মহোদয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্কটি সাজানো হয়েছে। রোপণ করা হয়েছে দেশি–বিদেশি ফুল–ফল ঔষধি গাছ। নিরাপত্তার জন্য ১৪টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পার্কের ভেতর বাণিজ্যিক দোকানপাট থাকবে না।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর