বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, সচিবালয়ে বিকাল ৩টায় এই সাক্ষাতের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি নিজেই আদালতে বলেছেন, তার বাঁ হাত ও বাঁ পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, প্যারালাউজড হয়ে যাচ্ছে। তিনি দাঁড়াতে পারছেন না, বসতে পারছেন না। আইনজীবীরাও গতকাল তার সাথে দেখা করে এসে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া দরকার “
বিএনপি এখন এ বিষয়টিতে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দিচ্ছে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানাবেন যে, অবিলম্বে বেগম জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে তার চিকিৎসা করা হোক।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাক্ষাৎ চেয়ে গত শুক্রবার তার একান্ত সচিবকে একটি চিঠি দেওয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
সেখানে সাক্ষাৎপ্রার্থী হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নাম দেওয়া হয়।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “এখন প্রথম হচ্ছে দেশনেত্রীর চিকিৎসা করা। সংবিধান ও আইনে আছে যে, একজন বন্দি ব্যক্তি যদি অসুস্থ হয়, সরকারের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তাকে সুস্থ করা। তারপরে আইনের মোকাবিলা করা।
“একজন অসুস্থ বন্দিকে বিচারের মুখোমুখি করা… সংবিধানে আমাদের মৌলিক অধিকারের ধারায় এটা সঙ্গত নয়, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তি এবং তাকে দ্রুত বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
‘অসুস্থতার কারণে’ গত সাত মাসে তাকে একবারও আদালতে হাজির করা সম্ভব না হওয়ায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি শেষ করতে কারাগারের ভেতরেই আদালত বসিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এর বিরোধিতা করে বিএনপি এই বিচারকে ‘ইন ক্যামেরা ট্রায়াল’ ও ‘সংবিধান পরিপন্থি’ আখ্যায়িত করেছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাদের ‘অসুস্থ নেত্রীকে জোর করে’ ওই আদালতে হাজির করা হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “অতীতেও বেগম খালেদা জিয়া মামলাকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করেছেন। এবারো যদি কোনো মামলার বিচার থাকে আগের মতই তিনি মোকাবিলা করবেন। মুক্ত বেগম জিয়াকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে সুস্থ খালেদা জিয়ার বিচার করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।”
যে মামলায় সাজা হয়েছে, সেই মামলায় আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও সরকার অন্য মামলায় ‘নানা কৌশলে’ তাকে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা নির্বাচনে যাব, যে নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, যে নির্বাচন হবে সংসদ ভেঙে দিয়ে, যে নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে, যে নির্বাচন হবে সেনাবাহিনীর তদারকির মাধ্যমে। এদেশে ইনশাল্লাহ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তো আর কোনো নির্বাচন ‘এদেশের জনগণ’ হতে দেবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন এই বিএনপি নেতা।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খন্দকার মোশাররফ হোসেন রোববার সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ নেতা-কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর