সাগরে এলএনজিবাহী (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) জাহাজের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। সেসব জাহাজে বিশাল গ্যাসের ভাণ্ডার অলস পড়ে আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পাইপলাইন আর সার্ভিসলাইন না থাকায় গ্রাহকদের এই গ্যাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে দ্রুত পাইপলাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে না।
এমনকি শিল্পমালিকরা নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন তৈরির জন্য আবেদন করলেও সে আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। বর্তমানে পেট্রোবাংলার কাছে এ রকম সহস্রাধিক আবেদন পড়ে আছে।
এলএনজিবাহী প্রথম জাহাজ দেশে পৌঁছানোর পর ১৪ জুন সরকারের বিশেষ কমিটির এক সভায় গ্রাহক অর্থায়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ তথা সার্ভিসলাইন নির্মাণের মাধ্যমে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী পেট্রোবাংলাকে দ্রুত একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু গত ৩ মাসেও পেট্রোবাংলার ওই সিন্ডিকেট এই প্রস্তাবনা পাঠাতে পারেননি।
ভুক্তভোগী ও বিশ্লেষকদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনের বছরে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের রীতিমতো সরকারের বিরুদ্ধে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ।
তারা মনে করেন, মূলত সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এ চক্রের ষড়যন্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট মহলের অদক্ষতার কারণে এলএনজির সুফল পেতে এহেন বিলম্ব হচ্ছে। তাদের মতে, আরও আগে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত ছিল।
অনেক দেরি হয়ে গেছে। এজন্য দেশের শিল্প সেক্টরসহ সামগ্রিক অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে এখনও সরকারের হাতে যে সময় আছে সেটিকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, তাদের হাতে এখন উচ্চ মূল্যের এলএনজি আছে। শিল্প সেক্টর ছাড়া এই এলএনজি বিক্রি করে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পাইপলাইন বা সার্ভিসলাইন না থাকায় অনুমোদন পাওয়া অসংখ্য শিল্প-কারখানায় গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে দ্রুত এই সার্ভিসলাইন তৈরি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে যেসব শিল্প গ্রাহক নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণ করতে চাচ্ছে, তাদের অনুমোদনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন আছে। দ্রুত এর সমাধান করতে হবে। কারণ কোনো কোম্পানিকে এখন নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণের অনুমতি দিলেও তাদের কাজ শেষ করতে ৪-৫ মাস সময় লাগবে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্রের অদূরদর্শিতা, গ্যাস নিয়ে ষড়যন্ত্র আর অদক্ষতার কারণে এলএনজির সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। মূল কারণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পাইপলাইন ও সার্ভিসলাইন না থাকা। এতে একদিকে জাহাজ থেকে শত শত কোটি টাকার গ্যাস উড়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর