চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নূরনগর কলোনির ভোটাররা কয়েক দিন আগেই স্মার্ট কার্ড পেয়েছে এবং অনেকের কার্ডেই ধরা পড়ছে অদ্ভূতুড়ে ভুল। আলম হোসেনের কার্ডে বাবা রবিউল ইসলামের নামের আগে এসেছে ‘মোছা.’। মায়ের নাম বরকতী খাতুনের নামের আগে লেখা আছে ‘মো.’। তিনি রেগেমেগে চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ‘বাবা-মায়ের নাম আবেদনপত্রে লেখার সময় কোনো সন্তান এমন ভুল করতে পারে?’ একই ক্ষোভ কলোনির রশিদারও, ‘স্মার্ট কার্ড পাব, এই খুশিতে সকাল থেকে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কার্ড নিয়ে বাড়ি এসে দেখার পর নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছিল। আমার স্বামী মো. রেজাউল হক আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। কিন্তু কার্ডে এসেছে আমার স্বামী আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট। তাঁর জন্ম তারিখ ৮ এপ্রিল ১৯৮৩, আমার ১ জানুয়ারি ১৯৭৮।’
সম্প্রতি দেশের যেসব জেলায়ই স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে সেখানেই দেখা যাচ্ছে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার বহু মানুষ চট্টগ্রাম খবরকে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছে, বলেছে ভুলের কারণে সমূহ বিপদের আশঙ্কার কথাও। এর মধ্যে এলাকা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়েছে মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়ার ভোটাররা। সদরের দুই লাখ ২২ হাজার ৮৫২টি স্মার্ট কার্ডের সব কটিতেই জেলার নাম ভুল এসেছে। জন্মস্থানে (ইংরেজিতে) Moulvibazar-এর স্থলে Maulvibazar লেখা হয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারবাসী লেখাপড়ার জন্য তাদের সন্তানদের বিদেশ পাঠাতে কিংবা নিজেরা বিদেশ যাওয়ার সময় বিপাকে পড়বে। জামালপুর পৌরসভার পিটিআই কেন্দ্রে পাওয়া গেছে জন্মস্থান ‘পাকিস্তান’ লেখা তিনটি স্মার্ট কার্ড। নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্ডগুলো তাঁদের তত্ত্বাবধানে রেখে দিয়েছেন। এ নিয়ে বাইরে অতটা জানাজানি না হলেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ স্মার্ট কার্ড বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জন্মস্থান ‘পাকিস্তান’ লেখা স্মার্ট কার্ড তিনটি নিয়ে বেশ বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন।
সেই সঙ্গে দুঃসংবাদ হচ্ছে, প্রায় আট কোটি ১১ লাখ নাগরিকের এনআইডি কার্ডের (জাতীয় পরিচয়পত্র) মূল তথ্য ফরমের সন্ধান এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এসব নাগরিক ২০০৭-২০০৮ সালে নিজেদের ছবিসহ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকার নির্বাচনী অফিসে এসব ফরম সংরক্ষিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে উইপোকা ও ইঁদুর ফরম নষ্ট করে ফেলেছে। কোথাও পানিতে নষ্ট বা নাশকতার আগুনে পুড়ে গেছে। এ কারণে ভুল নাগরিকদের, না নির্বাচন কমিশনের তা যাচাই করার উপায় নেই।
ভুলে ভরা ওই সব এনআইডি সংশোধন করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের জানাচ্ছেন, ওই সময় তাদের পূরণ করা ২ নম্বর ফরম (এনআইডির জন্য বিশেষ ফরম) পাওয়া যাচ্ছে না। এই আট কোটি নাগরিক ছবিসহ ভোটার তালিকা করার উদ্যোগের প্রথম ধাপে তথ্য দিয়েছিল। ফরম নষ্ট হওয়ার দায়টি যদিও নাগরিকদের নয়, তবে তথ্য সংশোধন করতে হলে তাদের আড়াই শ টাকার মতো ফি দিতে হবে। তবে ২০০৮ সালের পরে যারা ভোটার হয়েছে তাদের এনআইডির ভুল সংশোধন প্রথমবারের মতো নিখরচাতেই করার সুযোগ রয়েছে।
কয়েক দিন আগে এনআইডির প্রধান কার্যালয়ে সবুজবাগ থানার পূর্ব বাসাবো এলাকার সাহানা হোসেনের এনআইডির তথ্য সংশোধনের জন্য গেলে সংশ্লিষ্টরা জানান, সাহানা হোসেন ভোটার হয়েছেন ২০০৮ সালে। এ কারণে তাঁর ২ নম্বর ফরম পাওয়া সম্ভব না। তাঁকে টাকা দিয়েই তথ্য সংশোধন করতে হবে। সাহানা হোসেনের নামের বাংলা বানান ঠিকই রয়েছে। কিন্তু ইংরেজি বানান লেখা হয়েছে সানা হোসেন। সাহানা হোসেনের মেয়ে সামিমা সাবাবী অর্পি ভোটার হয়েছেন ২০১০ সালে। তাঁর জন্ম তারিখ ২৪ নভেম্বর। কিন্তু কার্ডে ছাপা হয়েছে ১৪ নভেম্বর। নামের ইংরেজি বানানেও ভুল। এনআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সামিমা সাবাবী অর্পির সার্ভার থেকে ২ নম্বর ফরম বের করে দেখেন সেখানে কোনো ভুল নেই। ভুল হয়েছে ডাটা এন্ট্রির সময়। ওই কর্মকর্তারা জানান অর্পির কার্ডের ভুল সংশোধন নিখরচাতেই করা যাবে। এ রকম সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন অনেকেই সেখানে ভিড় করছে।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর