গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে যে স্থবিরতা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। এলএনজি সরবরাহ শুরুর পর এখন একে একে খুলতে শুরু করেছে বন্ধ থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানাসহ বিভিন্ন মিল–কলকারখানা। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে সার উৎপাদন শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড বা সিইউএফএলেও। টানা নয় মাসেরও বেশি বন্ধ থাকায় কলকব্জা বিগড়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রায়াত্ত এ কারখানাটির। গত শুক্রবার সকাল থেকে সিইউএফএলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। কাফকোতেও বর্তমানে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদনে ফিরেছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ওই দিনই গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সব মিলিয়ে এলএনজির সুফল মিলতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। গত ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজির সরবরাহ শুরু হয় বন্দর নগরীতে। এখন গড়ে সরবরাহ মিলছে তিনশ’ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস। এর আগে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরুর পর প্রথমে ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ হচ্ছিল। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তা বেড়ে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে । পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহ দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সিইউএফএল কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। কিন্তু যান্ত্রিক নানা সমস্যায় কারখানাটি উৎপাদনে যেতে পারছিল না। স্বাভাবিকভাবে চালু করার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সার উৎপাদন শুরু হলেও এবার সিইউএফএল এর সারের দেখা পেতে দশ দিন টানা চেষ্টা করতে হয়েছে। শুক্রবারে শুরু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত কারখানাটিতে প্রায় আড়াই হাজার টন সার উৎপাদিত হয়েছে। মাসের পর মাস বন্ধ থাকা কারখানাটির বহু যন্ত্রপাতি জং ধরেছে। বহু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে যে বহু যন্ত্রপাতি চুরিও হয়েছে। সবকিছু মিলে অন্তত দশ হাজার কোটি টাকা দামের সিইউএফএল–এর অবস্থা শোচনীয়। শেষ দফায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বন্ধ হয়েছিল সিইউএফএল। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কারখানাটির চাহিদা মোতাবেক গ্যাস দিতে না পারায় এটি বন্ধ করে দিতে হয়। কারখানাটিতে দৈনিক প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগে। কারখানাটিতে গ্যাস শুধু জ্বালানিই নয়, সার তৈরির কাঁচামালও। গ্যাস থেকেই ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহের জন্য শিল্প মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।
গ্যাস পাওয়ার পর কারখানা চালু করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যা চিহ্নিত হতে থাকে। গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। ত্রিশ বছরেরও বেশি পুরানো কারখানাটির একদিকে জোড়া দিলে অন্যদিকে বিগড়ে যাচ্ছিল। অবশেষে গ্যাস পাওয়ার দশ দিন পর শুক্রবার সকাল থেকে কারখানাটিতে সার উৎপাদন শুরু হয়। শুক্রবার সারা দিনে ১৩শ’ টন সার উৎপাদিত হয় বলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দৈনিক আজাদীকে জানান। অবশ্য কারখানার উৎপাদন সংকট নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কারখানার অপর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে জানান, ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর সিইউএফএল চালু করা হয়েছিল। দৈনিক ১৭শ’ টন উৎপাদন ক্ষমতার কারখানাটির অবস্থা বেশ নাজুক। এটিতে বর্তমানে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩/১৪শ’ টনের বেশি সার উৎপাদন সম্ভব নয়। শুক্রবারে যে পরিমান সার উৎপাদিত হয়েছে তা কারখানার বর্তমান অবস্থাতে স্বাভাবিক উৎপাদন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সিইউএফএল কারখানায় উৎপাদিত সার বিসিআইসির ডিলারদের মাধ্যমে দেশের ২৫টি জেলায় সরবরাহ দেয়া হয় বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খায়ের আহমদ মজুমদার বলেছেন, আমরা সিইউএফএল এবং কাফকোতে পুরোদমে গ্যাস দিচ্ছি। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ায় এই দুইটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দিতে আমাদের আর কোন সমস্যা হচ্ছে না। আগামীতেও এই দুইটি কারখানায় গ্যাস দিতে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। তবে সার উৎপাদন করবে কি করবে না, বা সিইউএফএল কতটুকু গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে তা তারাই নির্ধারণ করবে। আমরা তাদের চাহিদার পুরোটাই গ্যাস সরবরাহ দেবো বলেও মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার খায়ের আহমদ মজুমদার। তিনি চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে আর কোন সংকট থাকবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর