জিতলে সরাসরি ফাইনালে, হারলে ধরতে হবে দেশে ফেরার বিমান। এমন সমীকরণ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। স্নায়ুচাপের সেই পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পেয়ে পাস করল টাইগাররা। ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল তারা। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ১৪তম আসরে অঘোষিত সেমিফাইনালে সরফরাজ বাহিনীকে ৩৭ রানে হারিয়েছে মাশরাফি ব্রিগেড।
এ নিয়ে টানা ৪ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারল পাকিস্তান। সবশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে টাইগাররা। এর প্রায় আড়াই বছর পর সাক্ষাতে লাল সবুজ জার্সিধারীদের বিপক্ষে হারের বৃত্তেই থাকল তারা।
জবাবে শুরুটা শুভ হয়নি পাকিস্তানের।নিয়মিত বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ যথারীতি তাঁর সেরাটা দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টায় সফল হলেন। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে অনিয়মিত বোলার মাহমুদ উল্লাহও যথাসাধ্য উজাড় করে দিলেন নিজেকে। এঁদের সঙ্গে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন লিটন কুমার দাশও। এই তিনের যোগফলে ফেঁসে যেতে থাকা ফাইনালের স্বপ্নও এর পুরো আকার নিয়ে মুঠোবন্দি হলো বাংলাদেশের।
মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। এমনিতে এই এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে নিয়মিতই বিপদ থেকে উদ্ধার করে আসা শোয়েব মালিক গেলেও থেকে যাওয়া ওপেনার ইমাম-উল হক আরেকটি জুটি গড়ে মিলিয়ে যেতে থাকা জয়ের রেখা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাতে সহযোগী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছিল লিটনকেও, মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ২২ রানে থাকা আসিফ আলীর সহজ ক্যাচ ফেলে। তাতেই ৭১ রানের পার্টনারশিপ গড়া ইমাম-আসিফ পাকিস্তানকে দেখাতে শুরু করে দিয়েছিলেন জয়ের তীরও।
কিন্তু সেই তীরে পাকিস্তান নয়, শেষ পর্যন্ত ভিড়ল বাংলাদেশ। কারণ নিয়মিত বোলার মিরাজের বলে আসিফকে (৩১) প্রথমে স্টাম্পিং করেন লিটন। এরপর ৮৩ রান করে ফেলা ইমামকেও। ক্রমাগত বাড়তে থাকা রানের চাপে অনিয়মিত বোলার মাহমুদ উল্লাহকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে যান পাকিস্তান ওপেনার। ওত পেতে থাকা লিটন আবারও সাফল্যের সঙ্গে স্টাম্পিং করে যেন ক্যাচ ফেলার দণ্ড মওকুফ করে নেন পুরোটা!
১৬৭ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমাম যাওয়ার পরে বাংলাদেশের জয় নিয়ে অনিশ্চয়তার আর কোনো অবকাশই ছিল না। বাকি ছিল শুধু ব্যবধান কত হয়, তা জানার। ৩৭ রানের জয়ে আগামীকাল দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে নিজেদের নাম লিখে নিল বাংলাদেশ। এই নিয়ে সবশেষ চার এশিয়া কাপের তিনটিরই ফাইনালে তারা। আগের দুইবারই হারে ফাইনাল ভাগ্য লেখা হলেও এবার সেটি বদলানোর মিশন নিয়েও নামবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমিফাইনালেও হলো তাই। ১২ রানেই নেই ৩ উইকেট। সেখান থেকেই মাত্র ১ রানের জন্য নিজের সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি বঞ্চনায় পোড়া মুশফিকুর রহিম (৯৯) আর মোহাম্মদ মিঠুনের (৬০) ১৪৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরু হওয়া খেলা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রত্যাশিত পুঁজি হয়তো দেয়নি। তবে যা দিয়েছে তা-ও নিতান্ত কম নয়।
কারণ ২৪০ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানের অবস্থাও এই আসরের বাংলাদেশের কাছাকাছিই। শুরুতেই বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করবেন শোয়েব মালিক। তিনি কিছুটা পারবেন, কিন্তু পুরোটা নয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না। ১৮ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে বসার পর ওপেনার ইমাম-উল হককে নিয়ে উদ্ধারকাজে আবারও নামতে হলো মালিককে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রমিজ রাজা শুভকামনা জানালেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে, ‘ঘরে ফেরাটা নিরাপদ হোক।’ রমিজ আর কী বলতে পারেন, পাকিস্তান যে এশিয়া কাপ ফাইনালের ‘দর্শক’!
আরব আমিরাতকে অনেক দিন ধরে ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। কন্ডিশনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তারাই। স্বাভাবিকভাবে অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক এবারের এশিয়া কাপে ফেবারিট হিসেবে পাকিস্তানের নাম বলেছিলেন। অথচ ফল হয়েছে উল্টো। ফাইনালেই উঠতে পারেনি পাকিস্তান। আজ আবুধাবিতে বাংলাদেশের কাছে ৩৭ রানে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় সরফরাজদের।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর