সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বড় পদে চাকরি শেষে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতার কঠোর সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাঁর মতে, এখন রাজনীতি হয়ে গেছে গ্রামের ‘গরিবের বউয়ের মতো’। এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই। যার যখন, যেভাবে ইচ্ছা রাজনীতিতে ঢুকছে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম বাধা। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের চিন্তাভাবনা করা উচিত।
আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সমাবর্তন।
স্বভাবসুলভ রসবোধ আর কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণে রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে কটাক্ষ করেছেন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের রাজনীতিবিদ বনে যাওয়ার প্রবণতাকে। আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে, গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ। অহনে যাঁরা শহরে থাকেন, তাঁরা তো ভাউজ চিনবেন না। ভাউজ হইলো ভাবি। ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকি আমরা, গ্রামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাবিদের ভাউজ ডাকা হয়। আর গরিবের বউ হলে মোটামুটি পাড়া বা গ্রামের সবাই আইস্যা ভাউজ ডাকে। এহন রাজনীতি হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। এখানে যে–কেউ, যেকোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে। কোনো বাধা–বিঘ্ন নাই।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অন্যান্য পেশায় চাইলেই যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও রাজনীতিতে তা আছে। যে কারণে সবাই চাকরি শেষ করে রাজনীতিতে ঢুকতে চায়। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি যদি বলি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিকসের লেকচারার হইতাম চাই, নিশ্চয়ই উপাচার্য সাহেব আমারে ঢুকাইবেন না। বা আমি যদি কোনো হাসপাতালে গিয়া বলি, এত দিন রাজনীতি করছি, হাসপাতালে ডাক্তারি করার লাইগ্যা দেও। বোঝেন অবস্থাটা কী হবে?’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ, সবাই ইঞ্জিনিয়ার কইন আর ডাক্তারই কইন, এই ভিসি সাবও ৬৫ বছর হইলে কইব, আমিও রাজনীতি করুম। যারা সরকারি চাকরি করে, জজ সাবরা যারা আছে, ৬৭ বছর চাকরি করব। কইরা রিটায়ার্ড কইরা কইব, “আমিও রাজনীতি করিব”। আর্মির জেনারেল অয়, সেনাপ্রধান অয়, অনেকে রিটায়ার্টমেন্টে গিয়েই কয়, “আমিও রাজনীতি করিব”। সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি বা জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রত্যেকেই রিটায়ার কইরা বলে, “আমি রাজনীতি করিব”। এটার কোনো রাখঢাক নাই, কোনো নিয়মনীতি বালাই নাই। যে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, তখনই রাজনীতিতে ঢুকছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডাইরেক্ট রাজনীতির মধ্যে আইসা তারা ইলেকশন করবে, মন্ত্রী হয়ে যাবে, এটা যেন কেমন-কেমন লাগে। যার জন্যেই আমার মনে হয়, আমাদের দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না।’
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর