“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ র্পযন্ত তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তানাদি এমনকি সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশী মুহব্বত না করবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
(এক)
মক্কা শরীফে যখন কুরাইশদের অত্যাচার বৃদ্ধি পেল, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ বক্করসিদ্দিক আলাইহসি সালাম উনাকে ইঙ্গিতে বলে রাখলেন, “হে আবূ বক্করসিদ্দিক (রা:) আপনি প্রস্তুত থাকবেন, যে কোন মূর্হুতে আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে মক্কাভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ আসতে পারে। নির্দেশে মোতাবেক একদিন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী আলাইহসি সালাম উনাকে জিন বিছানায় শোয়ায়ে এক মুষ্ঠি ধুলা হাতে নিয়ে শত্রুদরে উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে ঘর হতে বের হলেন এবং আবূ বক্করসিদ্দিক আলাইহসি সালাম উনার বাড়ী গিয়ে ঘরের দরজার কড়া নাড়া দিতে না দিতেই হযরত আবূ বক্করসিদ্দিক আলাইহসি সালাম দরজা খুলে দিলেন। হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ বক্করসিদ্দিক আলাইহসি সালাম উনাকে জিগ্গেস করলেন, “আপনি কি নিদ্রায় যাননি?” জবাবে হযরত আবূ বক্করসিদ্দিক আলাইহস্ সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “যেদিন আপনি আমাকে প্রস্তুত থাকতে ইঙ্গতি করেছিলেন, সেদিন হতে এক দিনের জন্যওে রাত্রে বিছানায় পঠি লাগাইনি। কারণ আপনার ডাকলে সাথে সাথে সাড়া দিতে না পারলে কি জানি কি বিয়াদবী হয়ে যায়।” মূলত: অন্তরে মহব্বতের আগুণ একবার জ্বলে উঠলে এমনিভাবেই চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
(দুই)
হযরত আলী আলাইহসি সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আপনার মহব্বত কি রকম ছিল? তিনি বলেছিলেন উনার আওলাদ মাতা-পিতা, ধন-সম্পদ এবং অত্যন্ত পাপিসার সময় ঠন্ডা পানরি চেয়েও অধিক।
(৩)
ওহুদ যুদ্ধে প্রথম বির্পযয়ের পর কুরাইশ বাহিনী পিছন থেকে এসে মুসলিম বাহিনীকে একযোগে আক্রমণ করে বসলো এবং সেই আক্রমণে ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করলেন। স্বয়ং রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তীরে আঘাতে র্জজরিত হয়ে গেলেন এবং উনার নিম্নপাটির সম্মুখভাগরে দুটি দান্দান মুবারক শহীদ হলো। হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুখ মুবারক থেকে খুন বয়ে যাচ্ছিলো। তখন আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত মালকে ইবনে সনিান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জখমী স্থানে মুখ লাগিয়ে খুন মুবারক চুষে খেয়ে ফেললেন, মাটিতে পড়তে দিলেন না। উনার এই মুহব্বত দেখে হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন-
র্অথ:- “আমার রক্ত যার রক্তরে সঙ্গে মিশে গেছে, তাকে জাহান্নামরে আগুন র্স্পশ করবে না।”
(চার)
একদনি হযরত রসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গি দিলেন। তাতে রক্ত বরে হচ্ছলি। তা কোথাও মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়রে রদ্বিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে তুলে দিলেন এবং ফিরে আসার পর হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “রক্ত কোথায় পুঁতে এসেছো?” জবাবে তিনি বললনে ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি তা পান করে ফলেছেি হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি তা পান করে ফেলেঠি হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “যার শরীরে আমার খুনী প্রবেশ করবে, তাকে জাহান্নামরে আগুন র্স্পশ করতে পারবে না।” কতটুকু মহব্বত থাকলে এভাবে রক্ত পুঁতে না রেভখ চুষে পান করা যায়, তা সহজে বোধগম্য।
(পাঁচ)
জলীলুল ক্বদর সাহাবী, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গভীরভাবে ভালবাসতনে। একদনি তিনি জানতে পারলেন যে, বছর নগরীতে এক ব্যক্তি রয়েছেন, যার চেহারা হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারকের মত। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বছরার গর্ভণরের নিকট পত্র লিখে ঐ ব্যক্তিকে সম্মানে উনার নিকট পাঠাতে নির্দেশ দেন।
নির্দেশ মোতাবেক লোকটিকে উনার নিকট প্রেরণ করা হলে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শহরে বাইরে গিয়ে ঐ ব্যক্তিকে মহার্মযাদার সহিত অর্ভ্যথনা জানান, উনার কপালে চুমু খান এবং বিপুল পরিমাণ উপহারসহ, রাজকীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করলেন। লোকটির সাথে কোন পরিচয় নেই, সর্ম্পক নেই, একটি মাত্র বাঁধন- দেখতে তিনি চলিলেন, হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত। তাই উনার এত আদর-আপ্যায়ন, যেন কোন রাজ্যের রাজকীয় সম্রাট।
উল্লেখ্য হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতের জোশে হযরত মুযাবিয়াহ রদ্বিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অনেক কিছুই করেছেন। তিনি রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার র্কতিত নথ, একখানা কাপড় ও কিছু কেশ মুবারক সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন এবং মৃত্যুর সময় ওছীয়ত করে গিয়েছিলেন, এগুলো যেন উনার নাক কান ও চোখের মধ্যে রেখে উনাকে দাফন করা হয়। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাল্লাহু আনহু হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অগাধ ভালবাসতেন বলেই অনুসরণ করতেন- উনাকে কদমে কদম। উনার প্রসঙ্গে হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাল্লাহু আনহু তিনি বলতেন, “আমি হযরত মু্য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাল্লাহু আনহু উনার নামাযের চেয়ে আর কারো নামাযে রসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অধিক মিল খুঁজে পাইনি।
(ছয়)
একজন ছাহাবী একদনি হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বললেন, “হুযূর! আপনার সাথে আমার এমন মুহব্বত যে, অনেক সময় আপনাকে দেখার জন্য মন পাগল হয়ে উঠে। তাই ছুটে আসি আপনর দরবারে কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর আপনি থাকবেন নবী আলাইহসি সালামগণরে জামায়াতে আর আমরা থাকবো বহু দূরে। তখন আপনার জিয়ারত আমাদের নছীব হবে না।” হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে রইলেন। তখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
ومن يطع الله والرسول فاولئك مع الذين انعم الله عليهم من النبين وصديقين والشهداء والصلحين.
র্অথ:- “যে আল্লাহ তায়ালা ও তদীয় রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে, সেই সব লোকদরে সঙ্গে থাকবে যাঁদরে উপর আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত থাকবে এবং উনারাই হলেন- নবী, সিদ্দিকি, শহীদ এবং নকেকারগণ।” (সূরা নিসা-৬৯)
আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমাদরে সকলকে হুববে রসূল ও দীদারে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নসীব করুন। (আমীন)
(হাকমে, তরিরানী, দারু কুতনী, আবু নঈম, ইবনুহব্বিান, খুজাইমা, খাছায়ছেুল কুবরা, সীরাতুন নবী সাইয়্যদিুল মুরসালীন, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর