জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেয়া খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের পর খালেদা জিয়ার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে নিশ্চই পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত সাজা বাতিল না হয়। সাজার দুই রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। এক. আপিল করে সাজা বাতিল করা এবং দুই. সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা। এখানে আমার অভিমত হলো, কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাকে সাজা বাতিল করতে হবে। তবে সাজা সাময়িক স্থগিত করে নির্বাচন করতে পারবেনা। ফলে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপিল শুনানি অবস্থায় থাকলেও হবে না, যে পর্যন্ত সাজা বাতিল না হয়।
এর আগেও অনেকেই সাজা স্থগিত রেখে নির্বাচন করেছেন সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তার জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা অনেকেই আইনের নানান ফাকফোকর দিয়ে করতে পারেন। কিন্তু আমার ব্যাখ্যা হলো যে, কেউ যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হন সেক্ষেত্রে তার দণ্ড যতক্ষণ না বাতিল হবে, সে পর্যন্ত তিনি মুক্ত মানুষ হিসেবে পরিগণিত হতে পারেন না। আবার সাজা স্থগিত হলে আপাতত জেল খাটা থেকে হয়ত অব্যাহতি পেতে পারেন, কিন্তু নির্বাচন করতে পারবেন না।
আর এ রায়টি সকল রাজনৈতিকদের জন্য একটি ম্যাসেজ বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, এই রায় নিশ্চই একটি ইঙ্গিত বহন করে যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে কেউ যদি অন্যায় করে সে কোন আইনের উর্ধে থাকতে পারেনা। তাই এই রায় সকল রাজনৈতিকদের জন্য একটি ম্যাসেজ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলার রায় ঘোষণার পর আজ মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
এই মামলার পলাতক আসামীদের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, যারা এ মামলায় পলাতক আছেন তারা তো হাইকোর্টে আসেননি (আপিল করেননি)। তাই তাদের বিষয়ে কিছু বলার হাইকোর্টের অবকাশ নেই।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া সহ মোট তিন আসামীর পক্ষে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করা হয়। এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে একটি রিভিশন আবেদন করে। আজকে হাইকোর্ট ডিভিশনে মামলাটি নিষ্পত্তি করেছেন। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রায় দিয়ে আসামীদের তিনটি আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এবং দুদকের রিভিশন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেছেন। এর ফলে এই রায়ের মাধ্যমে এই মামলাটির হাইকোর্টে পরিসমাপ্তি ঘটলো।
রায় ঘোষণার সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে হাজির না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের ইচ্ছা। তাদের আদালত সকল সুযোগ প্রদাণ করেছেন। গত চারমাস ধরে হাইকোর্টে ২৮ কার্যদিবস এ মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। সম্পূর্ণরকম সুযোগ তাদের দেয়া হয়েছে। এরকম সুযোগ দেওয়া নজিরবিহীন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই রায়কে একতরফা এবং নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতে এ ধরণের সাজা দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্যের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, এর কোন সারবত্তা নেই। তারা এতক’দিন শুনানি করেছেন।
মামলাটির পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কি হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাধারণত হাইকোর্টের রায়ের পর ৩০দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল করার বিধান রয়েছে। তবে আপিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নিবেন। এটা তাদের বিষয়।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর