আকাশে ওড়ার অল্প কিছু পরই সাগরে বিধ্বস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার উড়োজাহাজটির আগে থেকে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার দিনটির আগেই উড়োজাহাজটির ত্রুটি দেখা দেয় বলে কারিগরি লগ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উড়োজাহাজের ১৮৯ জনের কেউই বেঁচে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কম ভাড়ার উড়োজাহাজটির কারিগরি লগের তথ্য বিবিসি পেয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, গত রোববার ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে জাকার্তা যাওয়ার সময়ের এই ফ্লাইটটির কারিগরি লগ থেকে জানা যায়, এর যন্ত্র ‘নির্ভরযোগ্য ছিল না’ এবং উড়োজাহাজটি প্রথম কর্মকর্তার (ফার্স্ট অফিসার-এফও) কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল পাইলটের। তবে লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য জানতে পারেনি বিবিসি।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা ছেড়ে যায় জেটি-৬১০ ফ্লাইটটি। এক ঘণ্টার মধ্যে পাংকাল পিনাংয়ের দেপাতি আমির বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির। তবে ওড়ার ১৩ মিনিটের মধ্যে কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফ্লাইটটির। শেষ মুহূর্তে পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়। বিমানটিকে সর্বশেষ সাগর পাড়ি দিতে দেখা যায়। বিমানটিতে তিন শিশুসহ ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া দুজন পাইলট ও ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এটা বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের (৭৩৭–এর নতুন সংস্করণ) উড়োজাহাজের প্রথম কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা। উদ্ধারকারীরা কয়েকজনের মরদেহ এবং শিশুর জুতাসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করতে বলা হয়েছে।
বিবিসির কাছে থাকা কারিগরি লগের তথ্য থেকে জানা গেছে, আগের ফ্লাইট সুপারিশ করেছিল, ক্যাপ্টেনের উড়োজাহাজের গতিসংক্রান্ত রিডিং যন্ত্রটি নির্ভরযোগ্য নয়, ক্যাপ্টেন ও প্রথম কর্মকর্তার যন্ত্রগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাসংক্রান্ত রিডিংয়ের (আলটিটিউড রিডিং) সামঞ্জস্য নেই।
লগে বলা ছিল, ‘ক্যাপ্টেনের যন্ত্র নির্ভরযোগ্য নয় বলে শনাক্ত হয়েছে। এফওর কাছে তা হস্তান্তর করা হোক’। এরপরও ক্রুরা ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা নিরাপদেই জাকার্তায় অবতরণ করে।
এর আগে লায়ন এয়ারের প্রধান নির্বাহী এডওয়ার্ড সাইরেইট বলেছিলেন, বালির দেনপাসার থেকে জাকার্তা যাওয়ার পথে উড়োজাহাজটির ‘কারিগরি ইস্যুতে’ অনির্দিষ্ট সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু বিষয়টি পরে ‘সমাধান’ করা হয়। তিনি বলেন, ‘যদি উড়োজাহাজটি ভেঙে যেত, তাহলে দেনপাসার থেকে তা ওড়া অসম্ভব ছিল। আমরা ফ্লাইট ক্রুদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করি।’ তিনি আরও বলেন, তাঁরা ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের ১১টি উড়োজাহাজ পরিচালনা করেন, কিন্তু সেগুলোতে একই ধরনের কারিগরি সমস্যা নেই।
গতকাল জেটি–৬১০ ফ্লাইটটি জাকার্তা থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ওড়ার পর এক ঘণ্টা পর তা পাংকাল পিনাংয়ের দেপাতি আমির বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর ফ্লাইটটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ সংস্থার প্রধান সুতোপো পুরও নুগ্রহ বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের অংশবিশেষ ও যাত্রীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের ছবি দেন। এসব জিনিসপত্র সাগরে ভেসে ছিল।
উড়োজাহাজে ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০ জন কর্মচারী ছিলেন। তাঁরা পাংকাল পিনাংয়ের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। জাকার্তা থেকে তাঁরা ফিরছিলেন।
এক বিবৃতিতে লায়ন এয়ার জানায়, উড়োজাহাজটির পাইলট ও কো–পাইলটের ১১ হাজার ঘণ্টারও বেশি ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
চট্টগ্রাম খবর/কে.বি.আর