ব্রাজিলের অ্যামাজনের দুর্গম অঞ্চলে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আদিবাসী নেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা। ব্রাজিলের আদিবাসী সংগঠন ফেডারেশন আর্টিকুলেশন অব ইন্ডিজেনাস পিপল অব ব্রাজিলের (এপিআইবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদিবাসীদের কভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা ১ মের ৪৬ থেকে ৯ জুন ২৬২-এ গিয়ে ঠেকেছে।
দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের সংখ্যার সঙ্গে এপিআইবির পরিসংখ্যান দেখায় যে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়া ৯ দশমিক ১ শতাংশ আদিবাসী মারা যাচ্ছে, যা ব্রাজিলিয়ানদের ৫ দশমিক ২ শতাংশের হারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের সংখ্যা এবং সরকারের ধীর প্রতিক্রিয়ায় দুর্বল আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার বিষয়ে সরকারের অক্ষমতার অভিযোগ উঠছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, অবৈধ খনিজ আহরণকারী ও অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে এমন সুরক্ষিত আদিবাসী অঞ্চলে সংক্রমণ ঘটেছে। গত সপ্তাহে দেশটির ফেডারেল অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি দলকে ‘সুস্পষ্ট অবহেলা’ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে সরকারি নার্স ও প্রযুক্তিবিদদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার কথা, সেখানে তাদের মাধ্যমে আদিবাসীদের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে।
৪ জুন সেসাই নামে পরিচিত ফেডারেল আদিবাসী স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগ স্বীকার করেছে যে তাদের চার কর্মী কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তারা দেশটির জাভরি ভ্যালি আদিবাসী অঞ্চলের কানামারি গ্রামে নিযুক্ত ছিলেন। পরদিন প্রকাশিত অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, আক্রান্ত শ্রমিকরা অন্য কয়েকটি গ্রামে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছে।
৩৩ হাজার বর্গমাইলের জাভরি ভ্যালি আদিবাসী অঞ্চলটির অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় বিচ্ছিন্নভাবে জীবনযাপন করে, তাদের কখনো কখনো ‘বিচ্ছিন্ন আদিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আদিবাসীদের স্বার্থ ও সংস্কৃতি রক্ষায় নিয়োজিত ব্রাজিলের সরকারি সংস্থা ফুনাই নিশ্চিত করেছে, এ ধরনের নয়টি দলের উপস্থিতি রয়েছে, যারা সম্ভবত এক থেকে দেড় হাজার জন।
এপ্রিলের প্রথম দিকে কভিড-১৯-এ অ্যামাজন নদীর উজানে তীরবর্তী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৫৫ জন কোকোমা আদিবাসী মারা গেছে। দক্ষিণ ব্রাজিলের সম্মেলন থেকে আসা একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে তারা সংক্রমিত হয়েছিল।
নৃতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য সর্বনাশা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। মহামারীর মধ্যে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বয়স্করা সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ইনস্টিটিউটো সোসিওমবেন্টালের একজন নৃবিজ্ঞানী টিয়াগো মোরিরা দোস সান্তোস বলেছেন, বৃদ্ধরা ওই জনগোষ্ঠীর বিশ্বদর্শন ধরে রেখে এনসাইক্লোপিডিয়ার কাজ করছেন। তারা একটি সংস্কৃতির অভিভাবক। আমরা কেবল পৌরাণিক কাহিনী এবং গল্পগুলো নয়; ভাষা, স্মৃতি ও জ্ঞানের বিষয়েও কথা বলছি, যা মানুষের অস্তিত্বের জন্য মৌলিক উপাদান। তবে আদিবাসীদের বেঁচে থাকা নিয়ে কথা বলেছেন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী গ্লেন শেপার্ড। তিনি বলেছেন, আদিবাসীরা মারাত্মক মহামারীর পরও টিকে থেকেছে। তারা জানে কীভাবে এগুলোর মধ্যেও জীবনযাপন করতে হয়। অসুস্থ ও সহিংসতার কারণে নিজে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তাদের পুরনো কৌশল। তাদের সামনে এখন টিকে থাকার এই একটাই পথ।
