রাউজান প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের মধ্যম কদলপুর গ্রামে সম্পত্তি আত্মসাত করতে দুই ভাইয়ের হাতে নিহত অপর ভাই মহিম উদ্দিন চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিট ভূক্ত ২য় আসামী এম জসিম উদ্দিন’র জামিন বাতিল করেছে আদালত৷
আজ (৩ সেপ্টেম্বর) আসামীর অনুপস্থিতিতে ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত জামিন বাতিল করেন৷ রাউজান থানার মামলা নং -০৩(১১)১৭ জি.আর -১৭৩/১৭
এই হত্যা মামলার ২য় আসামী জসিম হত্যার পর গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে জামিনে মুক্ত হয়ে সে দেশ ছেড়ে কাতারে পালিয়ে যায়৷ ইতিপূর্বে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে প্রধান আসামী আব্দুল মান্নান ও অপর আসামী ইজবাব উদ্দিন চৌধুরীও প্রবাসে পাড়ি জমান।
মহিম হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে নিহতে মহিম ও আসামী মান্নান ও জসিমের মা হাসিনা বেগম৷ মহিমকে তার অপর দুই ভাই লাঠি ও ইটের আঘাতে হত্যার সময় তাদের গর্ভধারিনী মা পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন৷ এক ছেলেকে হত্যার ঘটনায় অপর দুই ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম জানান, যাকে মেরে ফেলেছে সেও আমার ছেলে যারা মেরেছে তারাও আমারই ছেলে। তবে খুনি সে যেই হোক সে খুনি। আমিও আমার খুনি ছেলেদের বিচার চাই৷
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে৷ মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে৷ ইতিমধ্যে নিহত মহিম ও মামলার প্রধান দুই আসামীর মা আদালতে মহিম হত্যায় তার অপর দুই ছেলে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি প্রদান করেছেন৷
নিহত মহিম উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে আসামীদের পক্ষ থেকে নানান হুমকি ধমকি দেয়া হলেও মামলার বাদি নিহতের স্ত্রী আকলিমা আকতার কহিনুর বলেন, আমি আমার স্বামী ও আমার দুই সন্তানের পিতার হত্যার বিচার চাই৷ তারা প্রকাশ্য দিবালোকে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। ওরা আমাকে ও আমার সন্তানদেরো হত্যা করতে পারে কিন্তু আমি এখনো দেশের আইনের ওপর বিশ্বাস রাখছি৷ তবে জামিনের থাকা আসামীদের স্ত্রীরা জানে ওদের স্বামী কোথাই ? পুলিশ চাইলে হত্যার পর প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করতে পারতো। অজ্ঞাত কারনে রাউজান থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার তো করেনি বরং তারা পুলিশের নাকের ডগাদিয়ে বিমানে দেশ ত্যাগ করে৷
জানা গেছে,মহিম চৌধুরীর সঙ্গে বসতভিটা ও জমি নিয়ে তাঁর ভাইদের বিরোধ ছিল। ভাইদের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে মারা যাওয়ার মাসখানেক আগে মহিম রাউজান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। হত্যাকান্ডের দিন স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদের ভাইদের মধ্যে চলা বিরোধ মীমাংসার জন্য সন্ধ্যায় মহিমকে তার কার্যালয়ে ডাকে। চেয়ারম্যানের ডাকে মহিম ঘর থেকে বের হলে তাঁর দুই ভাই মান্নান, জসিম সহ অন্য আসামীরা মহিমের ওপর হামলা করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রাউজান থানার সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়াত উল্লাহকে ম্যানেজ করে প্রধান আসামী আব্দুল মান্নান প্রকাশ্য এলাকায় ঘোরাফেরা করেও অধরা ছিলো৷ একদিন এলাকাবাসি জানতে পারে খুনি আব্দুল মান্নান কাতার চলে গেছে৷ এই বিষয়ে রাউজান থানার তৎকালিন এবং নব নযুক্ত ওসির বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷